হযরত ওমর (রা.) ও বিধবার গল্প: মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
হযরত ওমর (রা.) ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং এক অসাধারণ শাসক। তার শাসনামল মানবতা, ন্যায়বিচার এবং সততার জন্য ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। আজ আমরা তাঁর সেই বিখ্যাত গল্পটি জানব, যা এক বিধবার সাহায্য করার মধ্য দিয়ে তার মহানুভবতা ও দায়িত্ববোধের অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে।
রাত্রিবেলা মানুষের সমস্যার খোঁজে বের হওয়া
হযরত ওমর (রা.) প্রায়ই রাতে ছদ্মবেশে মদিনার রাস্তায় বের হতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শাসক হিসেবে তার দায়িত্ব শুধুমাত্র প্রশাসনিক কাজ নয়; বরং মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করাও তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। এক রাতে, তিনি তার সঙ্গী আসলামের সাথে বের হন এবং একটি বাড়ির কাছ থেকে কান্নার শব্দ পান।
বিধবার করুণ অবস্থা
ওমর (রা.) কাছে গিয়ে দেখেন, একটি বিধবা নারী চুলায় হাঁড়ি বসিয়ে তার ছোট ছোট সন্তানদের আশ্বস্ত করছেন, যারা ক্ষুধায় কাঁদছিল। তিনি দেখতে পান, হাঁড়িতে আসলে কোনো খাবার নেই, কেবল পানি ফোটানো হচ্ছে যেন সন্তানরা ঘুমিয়ে পড়ে। এই দৃশ্য দেখে ওমর (রা.)’র চোখে পানি চলে আসে। তিনি বিধবার কাছে গিয়ে তার এই অবস্থার কারণ জিজ্ঞাসা করেন।
বিধবা জানান যে তার স্বামী মারা গেছেন, এবং তিনি কোনো সাহায্য বা সহায়তা পাচ্ছেন না। তিনি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন এবং তার সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য কিছুই নেই।
ওমর (রা.)’র তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা
ওমর (রা.)’র হৃদয় ভেঙে যায়। তিনি সাথে সাথে আসলামকে নিয়ে রাষ্ট্রের গুদামে যান এবং নিজের হাতে চাল, আটা, তেল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আসেন। আসলাম তাকে সাহায্য করার প্রস্তাব দিলে ওমর (রা.) বলেন, “কিয়ামতের দিনে এই বোঝা কি তুমি বহন করবে? আমি নিজেই বহন করব।”
বিধবার সন্তুষ্টি ও ওমর (রা.)’র শিক্ষা
বিধবার বাড়িতে গিয়ে ওমর (রা.) নিজ হাতে খাবার রান্না করেন এবং সন্তানদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি তাদের মুখে হাসি দেখতে পান এবং বিধবার চোখে কৃতজ্ঞতার অশ্রু ঝরে। বিধবা তখনো জানতেন না যে এই মহান ব্যক্তি ছিলেন খলিফা ওমর (রা.) নিজে। পরে যখন তিনি জানতে পারেন, তখন তার বিস্ময় আর আনন্দের সীমা থাকে না।
মানবতার অনুপম দৃষ্টান্ত
এই গল্পটি থেকে আমাদের শিক্ষা হয়, একজন নেতার দায়িত্ব শুধু শাসন করা নয়, বরং তার অধীনে থাকা মানুষদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হওয়া। হযরত ওমর (রা.)’র এই মহানুভবতা ও দায়িত্ববোধ মানবতার এক অনন্য উদাহরণ।
উপসংহার
হযরত ওমর (রা.)’র জীবনের এই ঘটনা থেকে আমরা সবাই মানবিকতা, সহমর্মিতা এবং নেতৃত্বের প্রকৃত অর্থ শিখতে পারি। মানবতার সেবা এবং ন্যায়বিচারের মাধ্যমে তিনি আমাদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তার জীবনচরিত আজও আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস।
ইসলামিক হাদিস ,ইসলামিক ইতিহাস,ইসলামিক গল্প,
Pingback: ইয়া জালালি ওয়াল ইকরামের ফজিলত ও তাৎপর্য: ইসলামিক হাদিস